নিঃসন্দেহে দারুল উলুম জাহাঙ্গীর আলম ক্বওমী মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাকালীন ইতিহাস এক মহৎ ত্যাগের ও সংগ্রামের ফল। এই দ্বীনি প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে যে অবস্থানে এসেছে, তার পেছনে রয়েছে অনেক কষ্ট, সাধনা এবং আল্লাহ তা'আলার অশেষ রহমত।
মাদ্রাসা একটি পবিত্র স্থান, যা আল্লাহ তা'আলার রহমত ও বরকতে পরিপূর্ণ। এই মাদ্রাসার সূচনাও ছিল মহান আল্লাহর এক বিশেষ অনুগ্রহের প্রতিফলন।
প্রতিষ্ঠার সময়কালে, ৩নং লক্ষীর চর ইউনিয়নে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় বা দ্বীনি প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়নি। এই অঞ্চলে ইসলামী শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে এক গভীর শূন্যতা বিরাজ করছিল। ঠিক সেই সময়ে, গভীর নিষ্ঠা ও দূরদর্শিতার সঙ্গে দারুল উলুম জাহাঙ্গীর আলম ক্বওমী মাদ্রাসা স্থাপন করা হয়।
স্থানীয়ভাবে দ্বীনি শিক্ষার এই শূন্যতা পূরণের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটির আত্মপ্রকাশ, এই অঞ্চলের মানুষের জন্য ছিল এক বিরাট মাইলফলক ও আল্লাহর এক বিশেষ আশীর্বাদ। এটি কেবল একটি শিক্ষালয় নয়, বরং আদর্শিক ও ইসলামী দ্বীনি শিক্ষার এক মজবুত ভিত্তি।
দীর্ঘ পথচলায় সকল ত্যাগ-সংগ্রামকে পাথেয় করে, মাদ্রাসাটি আজ লক্ষীর চর ইউনিয়নসহ বৃহত্তর এলাকায় দ্বীনি আলো ছড়ানোর এক শক্তিশালী কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
দারুল উলুম জাহাঙ্গীর আলম ক্বওমী মাদ্রাসার বর্তমান গৌরবোজ্জ্বল অবস্থান এক দিনে অর্জিত হয়নি। এর সুদীর্ঘ পথচলায় জড়িয়ে আছে গভীর ত্যাগ, অক্লান্ত সংগ্রাম এবং সর্বোপরি মহান আল্লাহ তা'আলার অশেষ রহমত। মাদ্রাসাটি কেবল একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, বরং ৩নং লক্ষীর চর ইউনিয়নসহ বৃহত্তর এলাকার মানুষের জন্য দ্বীনি শিক্ষার এক অবিস্মরণীয় পথচলা ও এক বিরাট আশীর্বাদ।
যেকোনো দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠা আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে এক বিশেষ রহমত। ঠিক তেমনি, দারুল উলুম জাহাঙ্গীর আলম ক্বওমী মাদ্রাসার সূচনাও ছিল এক বরকতপূর্ণ পদক্ষেপ।
দ্বীনি শূন্যতা পূরণ: মাদ্রাসাটি যখন প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন অত্র ৩নং লক্ষীর চর ইউনিয়ন এবং এর আশেপাশে ক্বওমী ধারার কোনো পূর্ণাঙ্গ ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল না। এই অঞ্চলের মানুষজন সঠিক দ্বীনি জ্ঞান অর্জন এবং তাদের সন্তানদের ইসলামি শিক্ষা প্রদান নিয়ে এক গভীর সংকটে ছিল। এই শূন্যতা পূরণের এক দৃঢ় সংকল্প থেকেই এর জন্ম।
গভীর নিষ্ঠা ও দূরদর্শিতা: এই মহান প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার পেছনে ছিলেন কতিপয় ধর্মপ্রাণ মানুষের গভীর নিষ্ঠা ও দূরদর্শিতা। নিজেদের সাধ্যের সবকিছু উজাড় করে দিয়ে, বহু কষ্ট ও প্রতিকূলতা পেরিয়ে তাঁরা এই দ্বীনি মারকায (কেন্দ্র) স্থাপন করেন। প্রাথমিক দিনগুলোতে অবকাঠামোগত অভাব, আর্থিক সংকট এবং লোকবলের স্বল্পতা ছিল নিত্যসঙ্গী।
ত্যাগ ও কুরবানি: তিলে তিলে গড়ে ওঠা এই মাদ্রাসার প্রতিটি ইটে মিশে আছে উদ্যোক্তা, শিক্ষক এবং স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের কঠোর ত্যাগ ও কুরবানি। একটি দ্বীনি প্রতিষ্ঠানকে সফলভাবে দাঁড় করাতে যে পরিমাণ ধৈর্য, শ্রম ও আল্লাহর উপর ভরসার প্রয়োজন হয়, তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এই মাদ্রাসার ইতিহাস।
দারুল উলুম জাহাঙ্গীর আলম ক্বওমী মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠা ৩নং লক্ষীর চর ইউনিয়নের সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। মাদ্রাসাটি এই অঞ্চলের জন্য প্রকৃত অর্থেই এক 'আশীর্বাদ' স্বরূপ।
আদর্শিক ভিত্তি স্থাপন: এটি শুধু কিছু ছাত্রকে অক্ষর জ্ঞান দিচ্ছে না, বরং আদর্শিক ও ইসলামী দ্বীনি শিক্ষার এক মজবুত ভিত্তি স্থাপন করেছে। ক্বওমী ধারার শিক্ষা-পদ্ধতির মূলনীতি অনুসরণ করে, মাদ্রাসাটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে চারিত্রিক উৎকর্ষতা, নৈতিক মূল্যবোধ এবং তাকওয়ার গুণাবলী সৃষ্টিতে বদ্ধপরিকর।
সমাজ গঠনে ভূমিকা: এই প্রতিষ্ঠান থেকে অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী ইলম অর্জন করে সমাজে ছড়িয়ে পড়ছেন। তাঁরা কেবল আলেম হচ্ছেন না, বরং মসজিদের ইমাম, শিক্ষক, সমাজ সংস্কারক এবং সর্বোপরি আদর্শ মানুষ হিসেবে সমাজ থেকে শিরক, বিদআত ও অনৈসলামিক কার্যকলাপ দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।
আধুনিক ও কার্যকর শিক্ষা: প্রতিষ্ঠার পর থেকে মাদ্রাসাটি সময়ের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার মানকে উন্নত করতে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শুধুমাত্র গতানুগতিক শিক্ষাদান নয়, বরং দ্বীনি জ্ঞানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কর্মমুখী দক্ষতা দিয়ে সমাজ গঠনে সক্ষম করে তোলাই এর অন্যতম লক্ষ্য।
দারুল উলুম জাহাঙ্গীর আলম ক্বওমী মাদ্রাসার এই পর্যায় আসা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপেই ছিল আল্লাহর সাহায্য ও মুষ্টিমেয় ধর্মপ্রাণ মানুষের অদম্য ইচ্ছা। প্রতিষ্ঠানটি যেমন প্রতিষ্ঠাতাদের ত্যাগের ফল, তেমনি লক্ষীর চর ইউনিয়নের সকল মানুষের জন্য এক চলমান সাদকায়ে জারিয়াহ (অবিচ্ছিন্ন সদকা)। এই মাদ্রাসা দ্বীনের শক্তিশালী মারকায হিসেবে টিকে থেকে যেন চিরকাল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে, সেটাই সকলের ঐকান্তিক কামনা।